Wednesday, April 29, 2015

মন্সুর হাল্লাজ

মন্সুর হাল্লাজ ছিলেন একজন ফরাসি আধ্যাত্মিক লেখক এবং তাসাওুফ এর শিখক ছিলেন । সে ৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ বা ২৪৪ হিজরি ২৬ মার্চ ফার্স প্রদেশের আল বাইজা তে জন্মগ্রহণ করেন যা বর্তমানে ইরান এর অভ্যন্তরে অবস্থিত । তার পুরো নাম "আবু আল মুগিথ হুসাইন মন্সুর আল হাল্লাজ" । যদিও সে ফরাসি বংশোদ্ভূত , তবে তিনি তার সব লেখনি আরবি ভাষায় লিখেছিলেন ।
আল হাল্লাজের দাদা ছিলেন সম্ভবত একজন জরথ্রস্ত্রিও (zoroastrian) ধর্মমত অনুসারী ছিলেন। আল হাল্লাজের বাবা খুবই সাধারন জীবন যাপন করতেন যা মন্সুর হাল্লাজকে ছোটবেলায় বেপকভাবে আগ্রহি করে তোলেন। হাল্লাজ খুব অল্প বয়সেই কুরআন মুখস্ত করেছিলেন । ১৮ বছর বয়স থেকেই তিনি অনেক দেশ ভ্রমন করেছিলেন । প্রথমে বাগদাদের তসটার , মক্কা , খুজেস্তান , খোরাসান , ত্রান্সেগিয়ানা , সিস্তান , ভারত এবং তুরকিস্তান । অবশেষে তিনি বসরা গমন করেন এবং ওমর ইবন উসমান মক্কি (র) এর কাছে ১৮ মাস সংস্পর্শে থাকেন । ইয়াকুব এ আক্তা তার মেয়ের সাথে মন্সুর হাল্লাজের বিয়ে দেয়ার কারনে ওমর মক্কি অসন্তুষ্ট হন। তাই মন্সুর হাল্লাজ বসরা ত্যাগ করে বাগদাদ চলে যান এবং জুনায়েদ আল বাগদাদির কাছে বায়াত গ্রহন করেন । তিনি মন্সুর হাল্লাজের আত্মিক উচ্চ মর্যাদার কারনে তাকে চুপচাপ এবং নিরিবিলি থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন । সে কিছুদিন বাগদাদির কাছে থেকে পরে আবার আরবের হেজাজে চলে যান এবং নিরিবিলি সেখানে সে একবছর সাধনা করেন । সেখানেও সে না থেকে আবার ফিরে যান বাগদাদ শহরে। সেখানে বেশ কিছু সুফি সাধকদের নিয়ে জুনায়েদ আল বাগদাদির কাছে একাধিক প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন কিন্তু জুনায়েদ তার কোন কথারই উত্তর দেন নি ।
জুনায়েদ বাগদাদি বলল ,"খুব শীঘ্রই সে সময় আসছে যেদিন তুমি মন্সুর হবে একটি রক্তাক্ত কাঠের টুকরো"
প্রতিউত্তরে হাল্লাজ বললেন , "যেদিন আমি হব রক্তাক্ত কাঠের টুকরো সেদিন তুমি পরবে আচারনিষ্ঠের পোশাক"
পূর্বে মন্সুর হাল্লাজ জুনায়েদ আল বাগদাদি (র) এবং ওমর আল মাক্কি (র) এর অনুসারী হলেও পরবর্তীতে তারা উভয়ই তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। সুফিদের মধ্যে হাল্লাজ ছিলেন বেতিক্রম। তখন বিখ্যাত সুফি সাধকরা সাধনার নিগুর রহস্য জনপ্রকাশে প্রকাশ করতেন না অপরদিকে মন্সুর হাল্লাজ তার লেখনীতে এবং শিখায় তিনি সব কিছুই প্রকাশ করে দিতেন । সত্য বলার জন্য এবং নিগুর সত্যকে সমাজের মানুষ গ্রহন করতে না পারায় সারা বিশ্ব তার শত্রুতে পরিনত হয় তখন । এবং তৎকালীন শরিয়ত পন্থি আলেমরা তার ওইসব কথার মর্ম বুঝতে পারেনি বা ভুল বুঝেছিল । এজিদের দোসরেরা তার বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র এবং তার বিরুদ্ধে ফতয়া জারি করেছিল

হযরত মন্সুর হাল্লাজ (র) এতটাই ধর্মপরায়ণ ছিলেন যে তিনি খুব অল্প বয়সেই কুরআনের হাফেয হয় । "অয়াসিত বাদ" নামক একটি মক্তব থেকে তিনি কুরআন শিক্ষা করেন । ছোটবেলা থেকে ধর্ম পরায়ন থাকার কারনে সে আত্মিক উন্নতি সাধন করেছিলেন । তাকে বলা হতো "হাল্লাজ আল আসরার" অর্থাৎ অন্তরের জ্ঞানের অধিকারি । সে বাল্য বয়সেই মানুষের হৃদয় পরতে পারত কারন তার অন্তর চক্ষু খোলা ছিল। মানুষের আত্মিক সুরত এবং অন্তর চক্ষু দিয়ে তিনি নানান রহস্য অবলকন করতে পারতেন ।

মন্সুর হাল্লাজের স্ত্রির নাম ছিল উম্মাল হুসাইন। তাদের তিনটি পুত্র সন্তান ছিল। ধর্ম প্রচার এবং ফানাফিল্লা অবস্থায় থাকার কারনে হাল্লাজ সংসার ত্যাগী ছিলেন । যদিও হাল্লাজ ছিলেন সুন্নি কিন্তু শিয়া মতাদর্শের সাথেও তিনি খুব একটা দ্বিমত পোষণ করেনি। যেহেতু আল্লাহ এক রাসুল এক কুরআন এক বিভেদ এবং ভুল আছে সব মতেই । হাল্লাজ তার গৌরবময় জীবনে তিন বার হজ করেছিলেন । তৎকালীন সময় ছিল উমাইয়া ও আব্বাসিওদের খেলাফতকাল । আর একি সাথে শিয়া সুন্নির দুই মতবাদ খুব প্রকট আকার ধারন করেছিল। যেহেতু মন্সুর হাল্লাজ ছিলেন সত্যের কাণ্ডারি সেহেতু প্রত্যেক মতবাদ এবং তৎকালীন খেলাফতকারিরা মন্সুর হাল্লাজের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।

আল্লাহর মহান বন্ধু হযরত মন্সুর হাল্লাজ (র) দেশ দেশান্তরে ধর্ম প্রচার করছিলেন খোরাসান (পার্সিয়া) এবং ত্রান্সজিয়ানা (central asiaতে) । সেখানে তিনি অসংখ্য মানুষকে হেদায়েত করেছিলেন এবং তার অসংখ্য ভক্ত সৃষ্টি করেছিলেন । তার অসংখ্য ভক্ত নিয়ে তিনি আহওয়াজ (ইরানের একটি শহর) থেকে মক্কার উদ্দেশে গেলেন । কিন্তু কি আর করা , যে যেখানেই আল্লাহর কথা বলেছে সত্য বলেছে সে যুগের মানুষদের কাছে নির্যাতিত হয়েছে। ইয়াকুব-এ-নাহরাজুরি নামক একজন ধর্মীও নেতা তাকে জাদুকর আখ্যায়িত করলেন । নানান অপপ্রচারে কষ্ট পেয়ে হাল্লাজ ফিরে গেলেন সেই আহওয়াজ এ বসরা হয়ে । একদিন হাল্লাজ বললেন , "এখন আমি যাব সেসব দেশে যেখানে বিভিন্ন দেবদেবীদের উপাসনা করা হয়, সেখানে আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দিতে"। এভাবেই মন্সুর হাল্লাজ (র) ঘোষণা দিয়ে রউনা হলেন। তিনি ভারত ,মধ্য এশিয়া, চিন দেশে গেলেন এবং মানুষকে এক আল্লাহর দাওয়াত দিলেন। ভ্রমন কালে বিভিন্ন দেশে মুক্তিকামী মানুষেরা তার কাছে পত্র লিখত এবং এক এক জাতি একেক ভাবে তাকে সম্বোধন করেছিল যেমন _ ভারতীয়রা "আবুল মুগিথ",চিনারা "আবুল মইন", খোরাশিয়ানরা "আবুল মোহর", ফরসিরা "আবু আব্দ আল্লাহ", খুজেস্তানিরা "রহস্যময় হাল্লাজ", বাগদাদে "মস্তালেম"এবং বসরায় "মখাব্বার"।

হাল্লাজের যেমন ছিল অগনিত ভক্ত তেরকম তার কট্টর বিরোধীও ছিল। মন্সুর হাল্লাজ যখন ফানাফিল্লাহ অবস্থায় ছিলেন এবং তার অন্তরের মুখ দিয়ে বললেন "আনাল হক" অর্থাৎ "আমিই সত্য" ঠিক তখনই তার মুরশেদ জুনায়েদ আল বাগদাদির সেই ভবিষ্যৎ বানী বাস্তবে রুপ নিতে লাগলো এবং আগুন চারিদিকে ছরিয়ে গেল। অবস্থাটা এরকম ছিল যে তার অসংখ্য অনুসারীরাও তাকে ভুল বুঝতে লাগলো এবং পক্ষ বিপক্ষের লোকজন এক হয়ে হাল্লাজের বিচার চেয়েছিল ।

অন্যদিকে জুনায়েদ আল বগদাদি , তিনিও হাল্লাজের পাশে ছিলেন না । ইসলামের মুখশধারিরা এই সুযোগে হাল্লাজের প্রচলিত বক্তব্য এবং আরও বিকৃত করে কথা খলিফা মতাসেম এর নিকট উপস্থাপন করলো।এবং বিলম্ব না করে হাল্লাজের বিরুদ্ধে উজির দার করাল যার নাম আলি ইবন ঈসা। তারপর মন্সুর হাল্লাজকে জেলখানায় বন্দি করা হল। বন্দি থাকা অবস্থাতেও তার অসংখ্য মুরিদান এবং মুক্তিকামী মানুষেরা তার কাছে সাক্ষাত করতে যেত এবং বিভিন্ন বিষয়ে এবং সমস্যার পরামর্শ নিতো। সেটাও সেই কুচক্রীরা সহ্য করতে পারেনি । নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল যেকোন সাক্ষাত। পাচ মাসের জন্য কেউ ই সাক্ষাত করতে পারেনি, কেবল ইবনে আতা এবং ইবনে খফিফ একবার দেখা করতে পেরেছিল। একদিন ইবনে আতা মন্সুর হাল্লাজের নিকট একটি বার্তা পাঠান যেন তিনি তার কথার জন্য ক্ষমা চান এবং কথাটি ফিরিয়ে নেন , তাতে তিনি মুক্ত হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু মন্সুর হাল্লাজ তো আল্লাহর শক্তিতে শক্তিমান, তার প্রতিটা কথা , প্রতিটা নিঃশ্বাস যে আল্লাহরই প্রতিচ্ছবি। তিনি উত্তর দিলেন "তাকে জিজ্ঞেস কর, কে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন?"
ইবনে আতা এ কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন এবং বললেন "আমরা মন্সুরের এক কণা পরিমান ও হতে পারিনি"

এভাবেই মন্সুর হাল্লাজ জেলখানাতে ছিলেন। এক রাত্রিতে জেইলার হাল্লাজের কক্ষে ঢুকে দেখে হাল্লাজ সেখানে নেই। পুরো জেলখানায় তালাশ করেও তার খোজ মেলেনি। পরেরদিন রাতে হাল্লাজ এবং গারদ উভয়কেই পাওয়া গেলনা। অবশেষে তৃতীয় দিনে উভয়কেই জেলখানায় পাওয়া গেল।
কারারক্ষীরা তাকে জিজ্ঞেস chargeকরলো "এই তিনটি রাতে যে ঘটনা গুল ঘটেছে তার মর্ম কি ?"
হাল্লাজ ঃ প্রথম রাতে আমি সেই মহান সত্তার কাছে মিলিত হয়েছিলাম তাই তোমরা আমাকে এখানে দেখনি, দ্বিতীয় রাতে মহান সত্তা আমার সাথে মিলিত হয়েছিল তাই কারাঘর সহ আমাকে তোমরা দেখনি আর তৃতীয় রাতে আমি জাহেরিতে ফেরত আসলাম যেন আইন রক্ষিত হয়। এসো, তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পালন কর।"

হাল্লাজ এর একরাতে নজরে আসলো পুরো জেলখানায় ৩০০বন্দি আতক আছে। তাদের উদ্দেশে হাল্লাজ বলল , "বন্দিরা !! তোমাদেরকে কি আমি মুক্তি করে দিব?"

বন্দিরা ঃ নিজেকে কেন মুক্ত করছনা ?
হাল্লাজ ঃ আমি আল্লাহর গোলামি করছি। আমি সত্য উদ্ধারের প্রহরি। আমি যদি চাই একটি ইশারায় তোমাদের বাধন খুলে দিতে পারি।
অতঃপর তিনি শাহাদাৎ আঙ্গুলি দিয়ে ইশারা দিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে বন্দিদের হাতের বাধন দু টুকরো হয়ে গেল।
বন্দিরা ঃ আমরা এখন কথায় যাবো? গেট তো তালাবদ্ধ।
হাল্লাজের ইশারার সাথে সাথে দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি হল এবং বন্দিরা বের হয়ে গেল । যাওয়ার আগে তারা বলল "হুজুর !! আপনি কি আমাদের সাথে যাবেন না ?"
হাল্লাজ ঃ না । আমি আল্লাহর রহস্যে আবদ্ধ।
পরদিন সকালে।
কারারক্ষীরা ঃ বন্দিরা কোথায় গিয়েছে ?
হাল্লাজ ঃ আমি তাদের মুক্ত করে দিয়েছি।
কারারক্ষীরা ঃ তুমি কেন যাওনি?
হাল্লাজ ঃ খোদা আমাকে তিরস্কার দিবে তাই যাইনি।
এই খবর তৎক্ষণাৎ খলিফার কানে পৌছালো। এবং খলিফা তার বিরুদ্ধে বেবস্থা নেওয়ার হুকুম দিলেন।
তারা হাল্লাজকে তিনশো বার লাঠি পেটা করেছিল। এবং প্রতিটা আঘাতে হাল্লাজের হৃদয় থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল "বাবা মন্সুর ! ভয় পেওনা"
পরে তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। তেরটি ভারি লোহার শিকল বহন করে মন্সুর হাল্লাজ খুব অহংকারের সাথে মঞ্চে হেঁটে যায় ।"বাব আল তাক" নামক মৃত্যুদণ্ডের মঞ্চে আসলো এবং কাঠের তক্তায় চুমু খেলেন ও তার অপর পা রাখলেন।
তারা উপহাস করে বলল "কি মন্সুর , কেমন লাগছে ?"
হাল্লাজ ঃ যিনি সত্য(হক) তিনি নিজে যে এই মঞ্চে উঠবেন......
তাকে প্রশ্ন করা হল "হে মন্সুর ! সুফিসম কি ?"
হাল্লাজ ঃ যার কিছুটা(ছোট) অংশ তোমরা দেখছ।
তারা প্রশ্ন করলো "তাহলে বৃহৎ অংশটা কি ?"
হাল্লাজ ঃ যেটা পর্যন্ত তোমরা পৌছাতে পারবেনা।

অতপর তার পবিত্র হাত দুটো কেটে ফেলা হয়।হাল্লাজ হাঁসতে লাগলো এবং বলল , "একজন বন্দির হাত কেটে ফেলা খুবই সহজ বেপার । আনাল হক"

খেপে গিয়ে জালেমরা তার কদম মোবারক ক্ষতবিক্ষত করলো।
হাল্লাজ আবার হাসল এবং বলল , "এই পা জোড়া দিয়ে আমি জগত ভ্রমন করেছি। আমার আরেক জোড়া পা আছে যা দিয়ে আমি এখনও দোজাহান ভ্রমন করছি। যদি পার তাহলে সে পায়ে আঘাত কর দেখি"

তৎক্ষণাৎ তিনি তার কাটা হাত দিয়ে তার সারা মুখমণ্ডলে রক্ত মাখিয়ে নিলেন।
জালেমরা জিজ্ঞেস করলো "এ কাজটি তুমি কেন করলে ?"
হাল্লাজ ঃ প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি আমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তোমরা ভাবতে পারো যে আমার মুখ ভয়ে ফ্যাকাসে হয়েছে। আমার মুখে রক্ত মেখে দিলাম যেন আমার লাল চেহারা তোমাদের চোখে ভেশে ওঠে।বীরের প্রসাধনী হচ্ছে তার নিজের রক্ত।

অতঃপর তার চোখ দুটি উপড়ে ফেলা হয়। কেউ কেউ তার জন্য কেদেছিলেন। অনেকেই পাথর মেরেছিলেন। তারা উদগ্রীব ছিলেন জিহ্বা কাটার জন্য।

হাল্লাজ বলল, ঃ "একটু ধৈর্য ধর, একটু সময় দাও কথা বলার ! হে খোদা (অঝর নয়নে)!! আমাকে অত্যাচারের কারনে তাদেরকে বর্জন করোনা আমার দোহাই এমনকি তোমার রহমত থেকে বঞ্ছিত করোনা। সমস্ত প্রশংশা তোমার, আমার পা বিক্ষত করেছে কারন আমি তোমার পথে পদস্থাপন করেছিলাম। এবং যদিও তারা আমার শিরচ্ছেদ করে ক্ষমা করে দিও ওগো দয়াময়।"

তারপর তারা হাল্লাজের কান এবং নাক কেটে ফেলে। জিহ্বা কেটে ফেলার আগে হাল্লাজের শেষ কথা ছিল _
"স্রস্টাকে ভালবাসা নিজের থেকে আলাদা নয়"
"যারা বিশ্বাস করেনা তাহাতে , তারা দ্রুত খোজ করে। যারা বিশ্বাস করে তারা ধৈর্যের সাথে খোজ করে। জেনে রেখো এটাই সত্য।"

সঙ্গে সঙ্গে তার জিহ্বা কেটে ফেলা হয় এবং সন্ধার নামাজের সময় তার শিরচ্ছেদ করা হয় (ইন্নালিল্লাহে ...)
তার গর্দান কাটার সময়ও হাল্লাজ হাসি মুখে ছিলেন।
অতঃপর আল্লাহর খেলা শুরু হল। চারিদিক থেকে আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো, রক্তের কণাগুলো "আনাল হক , আনাল হক" জিকির করতে লাগলো যা ছিল অনেক বেশি প্রকট। উজির খলিফা সবাই ঘাবড়ে গেলেন এবং তারা সঙ্গে সঙ্গে তার দেহ এবং রক্ত পুড়িয়ে দিলেন কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। অবশেষে শেষ উপায় বলতে জালেমরা ছাইগুলো তিগ্রিস নামক বাগদাদের সেই নদিতে নিক্ষেপ করলেন রক্ষা পাওয়ার জন্য। কিন্তু আল্লাহর গজব কি মানুষের পক্ষে সামলানো সহজ? এতেই বোঝা যায় তারা কত বড় নাফরমান কাফের ছিলেন। বাগদাদ শহর প্লাবিত হতে লাগলো যেন কেয়ামত হয়ে যাচ্ছিল । এবং প্রতিটি পানির ফোটা যেন জিকির করতে ছিল "আনাল হক আনাল হক আনাল হক"

হযরত মন্সুর হাল্লাজ (র) বলেছিলেন "আনাল হক" অর্থাৎ "আমি সত্য"। সত্যি তিনি যে মহান তার প্রমান দিয়ে গেছেন অসংখ্যবার যা দুনিয়ার বুকে বিরল। হাল্লাজ জিবিত থাক্তেই একদিন তার এক ভক্তকে বলেছিলেন এই দিনের আগাম ভবিষ্যৎ । এবং এর থেকে পরিত্রাণ এর উপায় ও বলে গিয়াছিলেন। অতঃপর তার সেই মুরিদ খলিফা কে জানালেন এবং হাল্লাজের কথা মত হাল্লাজের পরিধানের বস্ত্র নদিতে রাখলেন এবং সেই বাগদাদ জাতি আল্লাহর গজব থেকে পরিত্রাণ পেলেন। ২৮ মার্চ ৯১৩ খ্রিস্টাব্দে জগত শ্রেষ্ঠ আল্লাহর বন্ধু হযরত মন্সুর আল হাল্লাজ (রঃ) শহীদ হন।
Read More »